Halloween পার্টি – শান্তনু মুখার্জ্জী (জয়)

*************************Santanu Mukherjeeবহুজাতিক সংস্থা ব্রেমেট এন্ড ক্রুকের কলকাতা অফিসে আজ Halloween পার্টি। বিকেল চারটে থেকে কাজ কর্ম বন্ধ। সবাই ভূত সাজতে ব্যস্ত। রাত আটটায় কোম্পানির রিজিওনাল হেড অলকেন্দু মিত্র সব চেয়ে ভালো সাজা ভূতটিকে পুরস্কার দেবেন।একাউন্টেন্ট নির্মাল্য সাদা প্রলেপ মুখে লেপে কিম্ভুত সেজেছে। HR শ্রাবস্তী চুল খুলে মাথায় লাল ধ্যবড়ানো সিঁদুর গোলা টিপ পরে শাখচুন্নি হয়েছে আর রোগা পটকা গ্রাফিক ডিজাইনার কোত্থেকে একটা কালো আলখাল্লা জোগাড় করে মামদোর মেক আপ নিয়েছে।হালকা আলোয় মনে হচ্ছে এ অফিস নয়। ভুসুন্ডির মাঠ । লোকজন উৎসাহে নিজেদের গলা পর্য্যন্ত বদলে নাকি সুরে চিৎকার করছে।সেলসের রজত ক্লায়েন্ট মিটিঙে বাইরে গেছে। ওকে বার বার অফিস থেকে ফোন করছে ওর সহকর্মীরা। রজত বিশাল লম্বা । ঘন কালো কোঁকড়া চুল। আর চোখের একটা অসুখের জন্য সেটা সব সময় লাল হয়ে থাকে।মার্কেটিংয়ের সমীরণ রজতকে ফোন করে বললো, “ভাই তুই চলে আয় তাড়াতাড়ি। তোর মেক আপ নেবার দরকার নেই। তোর যা চেহারা তাতে ভূত বলে নিজেকে অনায়াসে চালিয়ে দিতে পারবি।”সন্ধ্যে ছটা বাজে। পার্টি তুঙ্গে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে হাজির হলো রজত।ব্যাটার মাথায় বুদ্ধি আছে। নিজের চেহারার পুরো এডভেন্টেজটা নিয়েছে। শুধু কপাল দিয়ে একটা লাল রং দিয়ে কিছুর প্রলেপ মেরেছে যেটা দেখে মনে হয় মাথার মাঝখানটা ফাটা।এ ফার্স্ট না হয়ে যায় না।সাতটায় যখন বস অলকেন্দু মিত্র হাজির হলেন তখন ঘরের পরিবেশ পাল্টে গেছে।এই সাজার শর্ত ছিল যে মেকআপ অফিসে করতে হবে। কিন্তু রজতের দাদা রাজীব টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার নামী মেক আপ ম্যান।রিসেপশনিস্ট সুনন্দা অভিযোগ করেছে যে রজত দাদাকে দিয়ে মেকআপ করে এসেছে আর তাই সে ডিস্কোয়ালিফাইড। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ঘরে উপস্থিত সবাই দুটো দলে ভাগ হয়ে গেছে। একদল সুনন্দাকে সমর্থন করছে আর একদল রজতের পক্ষে কথা বলছে।সব শুনে অলকেন্দু বাবু বললেন, ” আমি এর সমাধান করছি। আইনে বলে যে একজন দোষী ছাড়া পেলেও পেতে পারে কিন্তু সন্দেহের বশে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে সাজা দেয়া উচিত নয়। তাই আজ আমি রজতকেই বিজয়ী ঘোষণা করলাম। কিন্তু যদি এটা প্রমান হয় যে ও বাইরে থেকে সেজে এসেছে তাহলে ওকে সাসপেন্ড করা হবে।”এবার রজত মুখ খুলল। সবার মতো সেও একটা ঘরঘরে নাকি গলায় বলল ,” আমার দাদা কোনো মেক আপ করতে আমায় সাহায্য করেনি। যা দেখছেন তার জন্য আমিই ..”কথাটা শেষ হলোনা। কারন অলকেন্দু বাবুর মোবাইল বেজে উঠেছে।অলকেন্দু বাবু ফোন ধরতেই ওপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ ভেসে এলো।-” হ্যালো । মিঃ অলকেন্দু মিত্র বলছেন ?”
-“হ্যাঁ বলুন”
– “আমি রাজীব বলছি। আপনাদের অফিসে সেলসের রজতের দাদা।”
-“আরে আপনাকেই তো দরকার ছিল। আগে আপনি বলুন কি বলছেন”ফোনটা ছেড়ে অলকেন্দু বাবু তাকালেন রজতের দিকে।
তাঁর মাথা ভো ভো করছে। কি বলবেন, কি করবেন বুঝতে পারছেন না।রজত আবার সেই গলায় বললো , “কি স্যার । প্রমান পেলেন। আমি মিথ্যে বলিনি। তবে প্রাইজ পাওয়া আমার উচিত নয়। আমি তো আর সাজিনি। “এই বলেই প্রচন্ড হাসিতে ফেটে পড়লো রজত আর তার লাল চোখদুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইল। একটা প্রচন্ড হওয়ায় সিলিং থেকে ঝোলা আলো গুলো এদিক ওদিক দুলতে থাকলো আর সাত তোলার ওপরের জানলা থেকে রজত এক লাফ দিয়ে নীচে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।বাকি সবাই ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠে হতভম্ভ হয়ে ছুটল জানলার দিকে। সেখানে দোদুল্যমান পর্দা ছাড়া আর কিছু নেই।এডমিনের লতিকা চেঁচিয়ে উঠলো , “রজত সুইসাইড করল।”বাকিরা দৌড়ে নীচে যাওয়ার জন্য এগোতেই অলকেন্দু বাধা দিয়ে বললেন ,” যেও না। রজত আজ বিকেলেবেলা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এখুনি ওর দাদা ফোন করছিল। যে এসেছিল সে রজত নয়। ওর প্রেত।আজ বিকেলে পাঁচটায় ধর্মতলায় রজত বাস থেকে পড়ে যায় আর উল্টোদিকের আরেকটা বাস ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। স্পট ডেড।মাথাতে কোনো মেক আপ ওকে নিতে হয়নি।ওর মাথা ভেঙে দু ভাগ হয়ে গেছে। আমি মেডিকেল কলেজ যাচ্ছি। ওখানেই ওর বডি আছে। আর কে কে যাবে আমার সাথে এসো”
*************************
শান্তনু মুখার্জ্জী (জয়)
#SantanuStory

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *