********************************জনপ্রিয় FM চ্যানেলের প্রতিনিধি RJ পল শেষমেশ সফল ব্যবসায়ী Solutron Agency-র কর্ণধার নিলোৎপল চ্যাটার্জিকে ফোনে ধরে ফেললো।
কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি বলে বসল যে আজ মাদার্স ডে উপলক্ষে একটা ছোট বাইট চায়। ফেসবুক পেজে লাইভ হবে।
নিলোৎপল বলে দিল সকাল এগারোটায় সেক্টর ফাইভের অফিসে আসতে।
সকাল এগারোটা। ফেসবুক লাইভ শুরু হলো।
নিলোৎপল চুলটুল ঠিক করে বলতে শুরু করলো , ” মা আমার প্রেরণা। আমার ভগবান। আজ আমি যা কিছু জীবনে করেছি তার পেছনে মায়ের অনেক অবদান। তুমি সুস্থ থাকো মা। ভালো থেকো ।”
ফেসবুক লাইভ শেষ হলো। এর পর নিলোৎপলের বাড়ি। ওখান থেকে ওর মায়ের সাথে ফেসবুক লাইভ হবে।
নিলোৎপল ফোন করে বাড়িতে জানিয়ে দিল যে FM থেকে তার বাড়ি যাচ্ছে RJ পল ।
পল পৌঁছলে তাকে নিলোৎপলের মা শোভাময়ী দেবীর ঘরে নিয়ে গেল স্ত্রী সুনন্দা ।
একটা সুন্দর সাজানো ঘরে , খাটে শুয়ে এক অশীতিপর বৃদ্ধা।
পল গিয়ে তাঁর সামনে দাড়িয়ে বললো , “ও দিদা । এই ক্যামেরাতে একটু কথা বলতে পারবেন ?”
ঘোলাটে চোখ তুলে বৃদ্ধা বললেন , “কি বলবো বাবা । ”
পল বললো ,”আপনার ছেলেকে যা বলতে ইচ্ছে করছে। আজ মাদার্স ডে।”
বৃদ্ধা কুনুইতে ভর দিয়ে উঠে বসলেন ।
ক্যামেরা চালু হলো।
ফেসবুক লাইভ।
বৃদ্ধা কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। কাঁপা গলায় বললেন , ” কি বলি বলোতো?”
পল বললো ,”ছেলেকে যা বলতে ইচ্ছে করছে আজকের দিনে”
বৃদ্ধা চোখটা কুঁচকে বললেন ,”আসলে সিঁড়ির ঘরে থাকি তো। ওটা খুব অন্ধকার। আজ একটু আগে এই ঘরটায় এনে শুইয়ে দিল। এত আলো আমার অনেকদিন অভ্যেস নেই। চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। ”
লাইভ চলছে।
নিলোৎপল ফোন করেছে স্ত্রী সুনন্দকে । “শিগগিরি লাইভ বন্ধ করতে বল। মাকে কি বলতে হবে সেটা শিখিয়ে দাওনি কেন? ”
সুনন্দা ঘরে ঢুকে দেখলো বৃদ্ধা বলছে , “প্রেসারের ওষুধটা ফুরিয়ে গেছে । সাতদিন খাইনি। কাউকে দিয়ে একটু আনিয়ে দিবি বাবা। আর একবার বিকেলে পারলে আসিস। তোকে কাছ থেকে অনেকদিন দেখিনি। ”
লাইভ শেষ হলো। বা শেষ করতে হলো সুনন্দার অনুরোধে ।
সেদিন ফেসবুকে কমেন্ট আর শেয়ারে সমালোচনার বন্যা বয়ে গেছিল।
তবে RJ পল জানতে পেরেছিল নিলোৎপল মাকে ওই নতুন ঘর থেকে আর সরায়নি। এখন অফিস থেকে এসে নিয়মিত দেখাও করে।
এর কিছুদিন পর পল অফিস থেকে বেরোচ্ছে হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো।
পলের মা ফোন করেছে। উত্তেজিত গলায় মা বললেন , ” বাবু একটা খবর আছে। ”
পল বললো , “কি ?”
মা বললেন , ” একটু আগে ভোলাকাকা এসেছিল তোর মামা বাড়ি থেকে। বললো তোর মামা এখন তোর দিদুনকে খুব যত্ন করে। কি একটা FM চ্যানেলে প্রোগ্রাম না কি হয়েছে তার পর থেকে দিদুনকে খুব দেখাশুনো করে”
পল বললো , “বাঃ এত দারুন খবর”
ফোন রেখে মুচকি হেসে মনে মনে বললো , “মা, এটা আমার তোমার জন্য এ বছরের মাদার্স ডে গিফ্ট। আর পরের বার সব অভিমান ভুলিয়ে তিরিশ বছর পর তোমাকে আবার ওই বাড়িতে নিয়ে যাব। মামা তোমার সাথেও যে অন্যায় করেছে তার বিচারও তুমি পাবে। কথা দিলাম। তুমি দেখে নিও মা। ”
***************************************
শান্তনু মুখার্জ্জী ( জয়)
#SantanuStory