বিশু সামন্তর ঘটনা – শান্তনু মুখার্জ্জী (জয়)

************************************

বিশু সামন্ত দোকানে কাজ করে। নিউ মার্কেটে মেয়েদের জামা কাপড়ের দোকান। নাম walk in style। বেশ কেতা দুরস্ত দোকান। সকাল দশটায় খোলে। চাবি থাকে ক্যাশিয়ার সুনীল জানার কাছে। জানাবাবু নটা পঞ্চাশে মেট্রো থেকে এসপ্লানেড নেমে ঠিক দশটায় দোকানের সামনে হাজির হন। বিশু একমাত্র কর্মচারী যে তার আগেই এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

বিশুর বয়স ৪৫ । এক বছর আগে স্ত্রী মারা গেছে। এই বয়েসে পত্নী বিয়োগ হলে অনেকেই দ্বিতীয় বার বিয়ে করে। কিন্তু বিশুর সেদিকে কোনো উৎসাহ নেই। সে যতটা সময় সম্ভব দোকানেই কাটায়। দোকান বন্ধ হবার সময় হলে বিশুকে তাড়া দিয়ে বের করতে হয়।

জানাবাবু দরজা খুলে দিয়ে চা খেতে যান। সেই ফাঁকে বিশু দোকান ঝাঁট দেয়। ‘একদর’ লেখা বোর্ড ঝোলায় আর তারপর শোকেসে সাজানো ম্যানিকুইনের জামা পাল্টায়।

বিশু খুব কম কথা বললেও তার একটা দোষ আছে। সে নিজে নিজের সাথে প্রচুর বকবক করে আর একা থাকলে তার গলার ভলিউম বেশ বেড়ে যায়। আরেক কর্মচারী সীতানাথ শুনেছে যে বিশু তার মৃত বউয়ের সাথে কথা বলে। মানে একজন স্বামী যেমন স্ত্রীর সাথে সাংসারিক আলোচনা বা সুখ দুঃখের কথা বলে বিশু তেমন সব কথা বলে।

যেমন দুপুরে খাবার সময় শোকেসের পাশে কাঠের টুলটায় বসে টিফিন কয়েরিয়ারের ঢাকনা খুলে রুটি ছিঁড়ে ডালে ডোবাতে ডোবাতে নিজের মনে বলে ,”তুমি খেয়েছো তো ?”

সবাই ব্যাপারটা করুণার চোখে দেখে। আহা ! কি আর বয়েস। কি করে কাটাবে একা জীবন ?

দিন এভাবেই কাটছিলো। একদিন বিশু দোকানে এসে শুনল যে দোকানের মালিক নিকুঞ্জ বাবু বিশুকে ডেকে পাঠিয়েছে। বিশু কান টান চুলকে নিকুঞ্জ বাবুর ঘরে ঢুকে মৃদু গলায় জিগেস করলো, “ডাকছিলেন স্যার?”

নিকুঞ্জ বাবু খাতা খুলে কি সব হিসেব করছিলেন। একরকম মুখ না তুলেই শুধু একবার “হুঁ” বলে আবার কাজে মন দিলেন।

বিশু ওভাবেই প্রায় পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর নিকুঞ্জ বাবু হঠাৎ বলে উঠলেন , “বিশু , হরিশ পার্কে নতুন দোকান করেছি। জানো তো ?”

বিশু মাথা নেড়ে বললো , ” হ্যাঁ শুনেছি”‘

নিকুঞ্জ বাবু বললেন তোমায় ওই দোকানে কিছুদিন কাজ করতে হবে। এই দোকান তো ভালোই চলছে ভগবানের কৃপায়। ওই দোকানটাও দাঁড় করাতে হবে।

বিশু মুখটা তেতো করে বললো ,” আজ্ঞে আমি না গেলেই নয় ? এখানে সংসার পাতিয়ে নিয়েছি। আবার নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করা .. বুঝতেই তো পারছেন ।”

নিকুঞ্জ বাবু হো হো করে হেসে বললেন ,”বেশ তো। এবার নতুন জায়গায় সংসার পাতবে। তুমি ঝাড়া হাত পা মানুষ । তোমার কিসের চিন্তা।”

বিশু একটু ইতস্তত করে বললো ,”ঠিক একা বা ঝাড়া হাত পা নয়। আমারও পিছুটান আছে।”

নিকুঞ্জ বাবু চশমার ওপর দিয়ে তাকিয়ে একটা ব্যঙ্গাত্মক সুরে বললেন ,”বটে । তা গার্ল ফ্রেন্ড গোছের কিছু জুটিয়েছ না কি ?”

বিশু এর কোনো উত্তর না দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

সারা দোকানে ঢি ঢি পড়ে গেলো যে বিশুর নতুন সঙ্গিনী জুটেছে। ক্যাশিয়ার জানা বাবুর আবার মুখের অগোল নেই। তিনি বলে বসলেন , “তাহলে বউ মরে তোমার উপকার হয়েছে বলো।”

এ কথায় খারাপ লাগা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বিশু একটা বোকা বোকা হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলো যে সে কিছুই মনে করেনি।

সেদিন লাঞ্চে বিশু শোকেসের পাশে টুলটায় বসে রুটি আর ডাল খাচ্ছিলো। সতীনাথ শুনতে পেল বিশু আপন মনে আবার বক বক করছে। যেন পাশের কাউকে বলছে , “কি গো .. হরিশ পার্ক যাবে নাকি ? তুমি গেলে আমার কোনো অসুবিধা নেই।”

সতীনাথ মুহূর্তের মধ্যে রটিয়ে দিলো বিশু টুলে বসে একা একা তার অদৃশ্য সঙ্গিনীর সাথে কথা বলছে আর সবার ধারণাটা বদ্ধমূল হলো যে বিশু পাগল হয়ে গেছে।

পাগল দিয়ে দোকান চালানো যায় না। কোন খদ্দেরকে কি বলে দেবে কে জানে। তারপর আরেক বিপদ হবে। তাই নিকুঞ্জ বাবু ঠিক করলেন বিশুকে বিদায় করে দেবেন।

পরদিন বিশুকে জানিয়ে দেয়া হলো যে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। সে যেন অন্যত্র ব্যবস্থা করে নেয়। সবাই ভেবেছিল বিশু বিচলিত হয়ে পড়বে কিন্তু বিশুর মধ্যে তার লেশমাত্র কিছু দেখা গেল না। সে বরং উল্টে জানতে চাইলো ,”কবে থেকে আমার ছুটি?”

নিকুঞ্জবাবু বললেন, “পরের সপ্তাহটা থেকে যাও। আজ শনিবার। এই সোমবারের পরের সোমবার মাস পয়লা। সেদিন থেকেই তোমার ছুটি।

সেদিন দোকান বন্ধ করার সময় জানাবাবু দেখলেন বিশু শোকেসের পাশে টুলে বসে।

তাকে জানাবাবু জিগেস করলেন ,”বিশু বাড়ি যাবে না ?”

বিশু জানালো তার কাজ আছে আর তাই দেরি হবে। সে বলল যে দোকান সে-ই বন্ধ করে দেবে। চাবিটা যেন তাকে দিয়ে যাওয়া হয়। সে সোমবার সকালে এসে দরজা খুলে দেবে।

অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও যখন চাবি পাওয়া গেলো না তখন অগত্যা জানা বাবু নিকুঞ্জ বাবুর দ্বারস্থ হলেন।

নিকুঞ্জ বাবু সব শুনে বললেন ,”তাই করুন। চাবিটা ওকেই দিয়ে দিন। আজ ভাবছি লুকিয়ে দেখবো ও কি করে। আমরা ওকে দেখাবো যে বেরিয়ে গেছি । কিন্তু আসলে বেরোবনা। দোকানে কোথাও ঘাপটি দিয়ে ওর ওপর নজর রাখব। জানতেই হবে ও কি করে। রাতে দোকানে ওর গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে এসে ঢোকে না তো ?”

তাই হলো। সবাই বেরিয়ে গেল যথাসময়ে। বিশু ছাড়া। সে জানতেও পারলো না নিকুঞ্জ বাবু, জানাবাবু আর সতীনাথ আবার কখন এসে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শোকেসের পেছনে।

টুলে বসে আবার বকবক শুরু করলো বিশু। “বিয়েটা এবার সেরেই ফেলি। কি বলো। তোমার আপত্তি নেই তো ? বিশ্বাস করো তোমায় আমি এর চেয়ে অনেক ভালো রাখব। তুমি তো জানো তোমায় আমি কত ভালবাসি। আমি কারো পরোয়া করিনা। তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। তার প্রমাণ তো তুমি পেয়েছ । আমার বৌকেও সরিয়ে দিয়েছি শুধু তোমায় পাব বলে। ”

জানাবাবু চাপা গলায় বলে উঠলেন ,”কি বলছে বিশু । বউকে খুন করেছে ? এটাও কি ওর পাগলের প্রলাপ। কিন্তু কার সাথে কথা বলছে?”

নিকুঞ্জ বাবু ইশারায় চুপ করতে বললেন। ঘামে তার পাঞ্জাবি ভিজে গেছে।

বিশু বলে চললো, “বউটা বড্ড জ্বালাতন করত। সারাদিন শুধু খিট খিট। আচ্ছা তুমিও তো একজন মেয়ে । কই তোমার তো সাত চড়েও রা কাটেনা। জীবনটা প্রায় শেষই করে দিয়েছিল আমার। তারপর তো তুমি জানো। তোমায় তো সবই বলেছি। ছাদে কাপড় মেলছিলো । দিলাম এক ধাক্কা। সবাই ভাবলো পা পিছলে …” এর একটা রহস্যময় ঠান্ডা হাসির শব্দতে দোকান গমগম করে উঠলো।

বিশু আরো বলে চললো।

“শোনো আর দেরী করবো না। কাল রবিবার। দোকান বন্ধ। ভাবছি কালকেই তোমায় বিয়ে করব। বাড়িতেই সব আয়োজন করছি। আপত্তি নেই তো ?”

বিশু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার সে বেরোবে।

নিকুঞ্জবাবু, জানা বাবু আর সতীনাথ বিশুর নজর এড়িয়ে বাইরে এলেন। তিন জনেরই জোরে জোরে শ্বাস পড়ছে।

উল্টো ফুটপাথে চায়ের দোকানে বসে লিকার চায়ে চুমুক দিয়ে প্রথম কথাটা বললেন , নিকুঞ্জ বাবু।

-“আমাদের একটা বড় ভুল হয়েছে বলে মনে হয়।”

– ” কি ভুল ?” জিগেস করলেন জানা বাবু

– “বিশু পাগল নয়। আর কথাও ও একা একা বলে না। ”

সতীনাথ অবাক হয়ে বললো , ” মানে?”

নিকুঞ্জ বাবু বললেন, ” মানে খুব সহজ। সামনের বেঞ্চে দেখো। বুঝতে পারবে ।”

সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো ওরা । একটা অল্প বয়সী ছেলে চা খাচ্ছে আর আপন মনে বক বক করছে। না আপন মনে নয়। ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে ছেলেটার কানে একটা ছোট্ট কালো জিনিস গোঁজা।

“ব্লু টুথ ইয়ার ফোন ।” বলে উঠলো সতীনাথ।

নিকুঞ্জ বাবু বললেন , “ঠিক তাই। আমার ধারণা বিশু ফোনে কারো সাথে কথা বলে ।”

জানাবাবু বললেন, ” পাগল নয় মানলাম । কিন্তু ও তো খুনী। আরো মারাত্মক। পুলিশে খবর দিন নিকুঞ্জ বাবু।”

নিকুঞ্জ বাবু বললেন, “সে তো দেবই। একে বারে ওর নতুন বউ সমেত হাতে নাতে ধরব। আমার ভায়রা ভাই লালবাজারে আছে। ওর সাথে আজই কথা বলছি।”

পরদিন রবিবার। সন্ধ্যে বেলা নিকুঞ্জ বাবু, জানা বাবু, সতীনাথ আর পুলিশ ইন্সপেক্টর গড়গড়ি বাবু যিনি নিকুঞ্জ বাবুর ভায়রা আর দুজন কনস্টবল হাজির হলো বিশুর বাড়ির সামনে।

পুরোনো দিনের ভাঙাচোরা দোতলা বাড়ি। কিন্তু বেশ উঁচু। রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে শ্যাওলা ধরা ইঁট গুলো যেন দাঁত বের করে হাসছে। দেয়ালে ফাটল ধরিয়ে গজিয়ে উঠেছে বট আর অশ্বত্থের চারা। সামনে আগাছা দিয়ে ভর্তি একটা ছোট বাগান মত। তার মধ্যেই একটা লাল সুড়কি ফেলা এবারো খেবড়ো পায়ে হাঁটা পথ চলে গেছে জং ধরা লোহার গ্রিল লাগানো সদর দরজার দিকে।

একটা ঘরে আলো জ্বলছে। ভেসে আসছে হালকা সানাইয়ের মৃদু সুর। লোকজন নেই। তার মানে বিয়েটা গোপনেই সারছে। নিকুঞ্জ বাবু গড়গড়িকে বললেন ,”এই ভালো ব্যবস্থা। টোনা টুনি দুজনকেই একসাথে বাগে পাবে। আমার ধারণা বিশুর ওর বউকে খুন করার পেছনে মেয়েটির যথেষ্ট হাত ছিল।”

দরজায় বেল বাজালেন গড়গড়ি। একটু পরে একটা খুঁট করে শব্দ হলো। ছিটকিনি খোলার শব্দ। তারপর দরজা খুলে গেল। সবাই দেখলো বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে বিশু। পরনে কোঁচা ধুতি, গিলে করা পাঞ্জাবি, কপালে লবঙ্গ দিয়ে পরা চন্দন আর মাথায় টোপর।

বিশু একটুও না চমকিয়ে বললো, “আসুন আসুন। ভালো দিনেই এসেছেন। আজ বিয়ে করছি। ”

নিকুঞ্জ বাবু বললেন ,”তা কনে কই?”

বিশু উত্তর দিলো , “ওই তো ভেতরের ঘরে। আমি নিজে হাতে সাজিয়ে দিয়েছি। যান দেখে আসুন ।”

দরজায় কনস্টেবল দাঁড় করিয়ে দ্রুত পায়ে পাশের ঘরে ঢুকলেন নিকুঞ্জ বাবু । পেছনে বাকিরা।

একটা মেয়ে বেনারসী পরে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে। মাথায় ঘোমটা।

গড়গড়ি বাবু বললেন ,”একটু ঘুরুন এদিকে। ”

কোন সাড়া নেই।

গড়গড়ি বাবু আবার বললেন ,”কি হলো ? ঘুরুন”

মনেই হলো না যে কথাটা মেয়েটির কানে গেছে।

নিকুঞ্জ বাবুর কেন জানি না সন্দেহ হলো। উনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলেন আর এক টানে ঘুরিয়ে দিলেন কনে সেজে দাঁড়ানো মেয়েটিকে।

সেই মেয়েটি যেন টাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়লো নিকুঞ্জ বাবুর ঘাড়ে। মেয়েটির দুটো হাত নিকুঞ্জ বাবুর গায়ে লাগতেই তিনি চমকে উঠলেন। এতো মানুষের হাত নয়। মানুষের হাত এমন নিষ্প্রাণ হয় না ।

পিছিয়ে এলেন তিনি আর সাথে সাথেই সশব্দে ধড়াম করে মাটিতে পড়ে গেল মেয়েটি। আর পড়তেই যেটা হলো তাতে আঁতকে উঠলো ঘরের সবাই।

দেহ থেকে মাথাটা ছিঁড়ে গড়াতে লাগল মাটিতে। না এ কোন মানুষ নয়। পিশাচও নয়। এটা আর অন্য কিছু নয়। একে নিকুঞ্জ বাবু চেনেন। আগে বহুবার দেখেছেন । তার নিজের দোকানে। এ হলো নিকুঞ্জ বাবুরই দোকানে শোকেসে সাজিয়ে রাখা ম্যানিকুইন ।

দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ম্যানিকুইনের কপালে চন্দন আর নকল চুলের সিথির ফাঁকে চওড়া করে পরানো সিঁদুর।

তাহলে হেড ফোনে নয়। দোকানে শোকেসের পাশে টুলে বসে এই ম্যানিকুইনের সাথে কথা বলত বিশু। হ্যাঁ তা হতে পারে। জানাবাবুর মনে পড়ে গেল কি ভাবে দোকানে ঢুকেই পরম যত্নে ম্যানিকুইনটাকে সাজাতো বিশু । অন্য কেউ হাত দিলে সে কি ভয়ানক চোটে যেত। সবাই ভাবতো বিশু খুঁতখুঁতে । নিজের হাতে না করলে তার শান্তি হয় না। কেউ বোঝেনি বিশু এই ম্যানিকুইনের সাথে জড়িয়ে আছে অপার্থিব প্রেমে। যার জন্য সে এতটাই ব্যাকুল যে নিজের স্ত্রীকে খুন করতেও পিছপা হয়নি এই পুতুলকে নিয়ে সংসার পাতবে বলে।

না । কোনো সন্দেহ নেই। বিশুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া তাকে কিছুই বলা যায় না।

এইসময় একটা গোঙানির শব্দে সবাই ফিরে তাকালো। দরজা আঁকড়ে বিশু মাটিতে বসে কাঁদছে আর বলছে , “মেরে ফেললে। তোমরা ওকে মেরে ফেললে। আমি আমার বউকে মারলাম ওকে পাবার জন্য আর তোমরা ওকে মেরে ফেললে। আমি এখন কি নিয়ে থাকব ?”

তারপরেই সে উঠে দাঁড়ালো। দু চোখে যেন আগুন ঝরছে। বিশুর এমন রূপ আগে কেউ দেখেনি। তারপর সে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।

গড়গড়ি চেঁচিয়ে বললেন ,”ওকে ধরো”

নিকুঞ্জ বাবু, জানা বাবু আর সতীনাথ বেরিয়ে এলো। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ অনুসরণ করে ছুটলো কনস্টেবল। পেছনে বাকিরা।

ছাদে গিয়ে শব্দ থামল। নিকুঞ্জ বাবু চিৎকার করে বললেন ,”বিশু দাঁড়াও ”

তারপর সবাই ছাদে ঢুকতেই যা দেখল তাতে তাদের বুকের রক্ত জল হয়ে গেল।

ছাদের পাঁচিলে দাঁড়িয়ে বিশু। মুখে ম্লান হাসি। গড়গড়িকে উদ্দেশ্য করে সে বলল ,”বউ টাকে এখান থেকেই ধাক্কা মেরে ছিলাম জানেন। ওই নীচে গিয়ে পড়ল। একটা কাতর শব্দ করে সব চুপচাপ হয়ে গেল। আচ্ছা স্যার। আমিও যদি ঠিক ওখানেই গিয়ে পড়ি তাহলে কি বউটাকে খুঁজে পাবো ?”

নিকুঞ্জ বাবু বললেন , “বিশু নেমে এসো।”

বিশু যেন কথাটা কানেই তুললো না। তার দৃষ্টি নীচে।

গড়গড়ি চোখের ইশারায় কনস্টেবলকে বললেন বিশুকে ধরে নিতে।

কনস্টেবল পা বাড়াতেই বিশু মারলো এক লাফ। একটা কাতর শব্দ । আবার সব চুপ।

সবাই হুড়মুড়িয়ে নীচে নেমে এলো। বাগানের এক দিকে মুখ থুবড়ে পড়ে বিশু। রক্তে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। গড়গড়ি নাড়ি ধরে বললো ,” হি ইজ নো মোর। ও এখন পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।”

নিকুঞ্জ বাবু আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

****************************************

শান্তনু মুখার্জ্জী (জয়)

1 comment

  1. যাস্ট অসাধারন লাগল। আরো কিছু লেখা পড়ে দেখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *