*******************************
১৭ই সেপ্টেম্বর কলকাতার ঘুম ভাঙলো একটু দেরী করে। কারোরই কাল রাতে ঘুম হয়নি। সারা রাত জুড়ে ঠক ঠক শব্দ হয়েছে। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই বিস্ময়।
একি! যা সবাই দেখছে তা কি সত্যি না স্বপ্ন ?
বহুদিনের মন্থর গতিতে কাজ চলা শহরের বুক চিরে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শেষ। দমদম থেকে গড়িয়া মেট্রোও যুক্ত হয়ে গেছে । শেষ হয়ে গেছে জোকা থেকে বিবিডি বাগ মেট্রোর কাজ।
ভেঙে পড়া মাঝেরহাট ব্রিজ দাঁড়িয়ে আছে নতুন রূপে । গনেশ টকিজের উড়ালপুল তৈরি । কেউ বলবেনা এই ব্রিজ ভেঙে পড়েছিল এই সেদিন।
শুধু তাই না। বাকি উড়ালপুলগুলোতেও মেরামতির স্পষ্ট ছাপ। এখন আর গাড়ি গেলে চিংড়িহাটা ফ্লাই ওভার কাঁপছেনা।
কলকাতা শহর এক নতুন কলেবরে। কিন্তু এ অসাধ্য সাধন কে করলো এক রাতে ?
বেলা হতেই আর একটা আশ্চর্য জিনিস সবার চোখে পড়লো। মেরামত করা ব্রিজ আর মেট্রো লাইনের নীচে একজন পড়ে আছে চিৎ হয়ে। অনেক পরিশ্রমের পর যেন সে ঘুমোচ্ছে। কে লোকটা ? ডেকে জিগেস করবে ? কৌতূহলী জনতা কাছে যেতেই দেখলো কেউ নেই। তাহলে এত লোক ভুল দেখলো ?
এর মধ্যেই শোনা গেল আর একটা চিৎকার। হৈ হট্টগোল । রাস্তার মোড়ে, কলকারখানায় সব মণ্ডপে দেখা গেল বিশ্বকর্মা মূর্তি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। মুখে ক্লান্তির ছাপ। হাতে ময়লা। এ যেন পুজোর আগেই বিসর্জন হয়ে গেছে। শুধু যাবার আগে তিনি একাই সব কাজ শেষ করে দিয়ে গেছেন । আর বোধহয় তাঁকে ডাকলেও পাওয়া যাবে না।
“বাবা বাবা ওঠো। আজ বিশ্বকর্মা পূজো। তুমি না গেলে পূজো শুরু হবেনা। ”
মেয়ের ডাকে ধড়মড় করে উঠে বসলেন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। তারপর মেয়ের হাত ধরে ডুকরে কেঁদে বললেন, “এ পুজো করার আমাদের কোন অধিকার নেইরে। সবার থেকে ফাঁকি দেয়া যায় কিন্তু এক জায়গায় গিয়ে সবাই ধরা পড়ে। আমি ধরা পড়ে গেলাম মা। নিজের বিবেকের কাছে। কাল রাতে আমার বিবেক এসেছিল বিশ্বকর্মা সেজে।”
মেয়ে বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল , “তোমায় তো আগেই বলেছিলাম। অপরাধ স্বীকার করে নাও। তোমার প্রায়শ্চিত্ত হবে ৷”
*****************************************
শান্তনু মুখার্জ্জী (জয়)
#SantanuStory