
ছেলেটির মা দানাটাকে ভালো করে দেখে বললো ,” কোথায় পেলি এটা ? এ যে সোনা ! বল কোথায় পেয়েছিস ?”
নাকের শিকনি আর চোখের জলে একাকার করে ছেলেটা বললো ,” মা দুগ্গা দিলো যে “
অসুস্থ শরীরটা কোনো মতে টেনে হীন হিঁচড়ে তুললো মা। সপাটে একটা চড় মেরে বললো ,” আবার মিথ্যে কথা বলছিস ? যা ফেরত দিয়ে আয় !”
ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বললো ,” প্যান্ডেলে ঠাকুরের সাজ পরাচ্ছে দেখছিলাম। আমার পায়ে এসে এটা ঠেকলো। আমি ভাবলাম মা দুগ্গা আমায় দিয়েছে।”
ধুঁকতে ধুঁকতে মা বললো , “ তোকে বললাম না ফেরত দিয়ে আসতে। না। তোকে ভরসা নেই। তোর বোনকে নিয়ে যা ”
এই বলে মা হাঁক পাড়লো , “ নিরু একটু দাদার সাথে যাতো মা “
ভাই বোন বেরিয়ে গেলে খুব কষ্ট হলো মায়ের। সারাদিন খাওয়া হয়নি দুই ভাই বোনের। শরীর ভালো না। কাজে যায় নি তাই টাকাও পায়নি। বাপটা বেঁচে থাকলে কিছু একটা করত হয়তো।
ভাইবোন এসে দাঁড়ালো মা দুগ্গার সামনে। ছেলেটা সোনার দানাটা অঞ্জলির ফুল দেবার মতো মায়ের পায়ে ছুঁড়ে দিয়ে বললো ,” তোমার সোনা তুমি রেখে দাও। কেউ বিশ্বাস করেনা তুমি আমায় দিয়েছো “
বোন নিরু হঠাৎ দাদার হাত ধরে বললো , “ দাদা ,তুই যা বলিস মা দুগ্গা তাই শোনে ?”
ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে বললো , “শোনে তো “
বোন আবার জিগেস করলো , “ তুই যা চাস তাই দেয় ? “
ছেলেটা দৃঢ় ভাবে উত্তর দিলো ,” দেয় তো “
-“তাহলে একটু খাবার চা না রে। খুব খিদে পেয়েছে। মাকে বলবোনা ” করুণ সুরে বললো নিরু।
ছেলেটার জল ভরা দু চোখে যেন ঝিলিক খেলে গেলো।
বোনের হাত ধরে বললো ,” তাহলে এখানে হবে না। পাশের পাড়ায় বিস্কুটের ঠাকুর করেছে। ওখানে চল “
আলোর মালায় সাজানো বড় রাস্তাকে পেছনে রেখে অন্ধকার গলি দিয়ে ছুটতে লাগলো ভাই বোন। তাদের বিশ্বাস বিস্কুটের মা তাদের আজকে রাতের খাবারটা জুটিয়ে দেবেন।
***************************************************************
শান্তনু মুখোপাধ্যায় (জয়)