নীল তিমি – শান্তনু মুখোপাধ্যায় (জয় )

—————————————–

cropped-Blog-pic-e1481132015310.jpgআর বলবেন না ! খুব জোর বেঁচে গেছি। পড়বি তো পড় এক্কে বারে জাহাজ থেকে। আরে হ্যাঁ ! তা না হলে বলছি কি ! আচ্ছা ডিটেলে বলছি।
তো আমি জাহাজে করে ফিরছি কোলান দ্বীপ থেকে। কোলান দ্বীপ অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে আর পার্থ শহরের উত্তরে। দ্বীপটি লোহার জন্য বিখ্যাত।
জাহাজ যখন মাঝ সমুদ্রে তখন শুরু হলো ঝড়। ভারত মহাসাগর এমনিতেই সাংঘাতিক। তারপর এই দুর্যোগে মনে হলো সমুদ্র জাহাজটাকে নিয়ে লোফালুফি খেলছে। আর এই খেলায় আমার ক্ষেত্রেই ক্যাচ মিস হলো আর আমি ডেক থেকে পড়লাম সমুদ্রে। পড়া মাত্রই সিধে সাগরের একদম নিচে।
সাঁতার কেটে এগোচ্ছি। রং বেরঙের সামুদ্রিক মাছ আমার পাশ দিয়ে চলে গেলো। শেওলার ভেতরে মুখ গুঁজে থাকা অক্টোপাসটা আট পা তুলে হাঁই তুললো আর কিছু জলচর নাম জানা প্রাণী আমায় কিছুক্ষণ ঠুকরে নিজের মনে চলে গেলো।
এমন সময় হটাৎ দেখলাম তাকে। বিশাল বপু, ভয়ঙ্কর দর্শন নীল তিমি। সে ব্যাটা আমায় দেখে, ঠোঁটটা জিভ দিয়ে চেটে আমার দিকে ধেয়ে এলো।
সে কিন্তু এগিয়ে এসে আমায় মারলোনা। আমার কানে কানে বললো একটা গেম খেলবি ? আমি ভাবলুম মরার চেয়ে গেম খেলা ভালো। রাজি হলাম।
তিমি বললো পঞ্চাশটা টাস্ক দেব। সব করতে হবে কিন্তু। মাঝ পথে খেলা ছেড়ে পালতে পারবিনা। বললাম,” তাই হোক। “
আমায় প্রথমে সে বললো, “তোর বাড়ির গল্প বল। “
বাবা ,মা , সবার কথাই বললাম।
বাবা আর আমি এখনো দাবা খেলি। মায়ের সাথে নিয়ম করে চায়ের সময় আড্ডা আর পাড়ার বাচ্চাদের পড়ানো সবই বললাম।
নীল তিমি ঘার দুলিয়ে বললো বেশ বেশ। এবার দ্বিতীয় টাস্ক। একটা ভয়ের গল্প শুনে ভয় পেতে হবে। আমি বললাম আমি ভয় পাইনা। আমার স্টুডেন্টদের কাছে আমি সুপার হিরো। ভয় পেলে আমার চলবেনা।
তিমি একটু ভেবে বললো , “আচ্ছা তাহলে এই কাজটা কর। এই নে শংকর মাছের কাঁটা। নিজের হাত কেটে আমার পোর্টেট আঁক দিকি “
আমি কাঁটাটা হাতে নিয়ে বললাম , “হাতে কেন এই দেখ আমি কেমন তোর ছবি আঁকি। “
এই বলে সমুদ্রের নিচে বালির ওপর আঁচড় কেটে তিমি এঁকে দিলাম।
সাইজে একটু ছোট হলেও দেখতে হুবহু এক। তিমি বললো তুই তো দারুন আঁকিস ! কে শেখালো ?”
আমি বললাম অবসর সময়ে শিখে নিয়েছি। গানও গাইতে পারি। বাবা আমার গান খুব ভালোবাসেন। “
তিমির মুখ ভার। আমায় বললো ,”তুই এতো সুখী কি করে ?তোর দুঃখ হয়না “
আমি বললাম ,” কেন হবেনা ! কিন্তু আমি পাত্তা দিই না। এতো কষ্ট করে মানব জীবন পেয়েছি। এ কি দুঃখ পেয়ে নষ্ট করার জন্য “
তিমি বললো, “তাহলে তুই খেলা শেষ করবি কি করে?”
আমি বললাম,” কেন ?”
নীল তিমি ঠান্ডা গলায় বলল ,” শেষ টাস্কে গিয়ে তোকে মরতে হবে। সুইসাইড !”
আমি হোহো করে হেসে উঠলাম।
তিমি অবাক।
আমি বললাম ,” ওটি হচ্ছেনা। বাড়িতে মা নারকেল কুড়ো দিয়ে সোনা মুগের ডাল রেঁধেছে। সাথে ঝুরঝুরে আলু ভাজা। আর আমি কিনা সুইসাইড করবো। পাপ হবে না। “
তিমি বললো, ” কিন্তু কিছু তো মারতেই হবে।”
আমি বললাম ,” তাহলে আয় তোকেই মারি ” এই বলে শংকর মাছের কাঁটা উঁচিয়ে ধরলাম।
তিমি ,”বাবাগো ছেড়ে দে ” বলে চিৎকার জুড়লো। আমি এক লাফে তিমির ওপরে উঠে বললাম,” বল আর কখনো কারো সাথে এমন খেলা খেলবি ?”
তিমি বললো ,”বিশ্বাস কর আমি কিছুই করতে পারবোনা যদি তোর বাবা মায়ের মতো সবাই তাদের সন্তানের দিকে একটু নজর দেয়। যদি তারা নিজেদের গন্ডি ছেড়ে বেরিয়ে ছেলে মেয়েদের বন্ধু হয়। তাদের গান , কবিতা , আঁকা নিয়ে অবসর কাটানোয় উদ্বুদ্ধ করে। আমি তো একা কাউকে দেখলেই তার সাথে খেলতে চাই। তাই একটু সবাইকে বল যে একা থাকাটা বন্ধ করতে। এটা সামাজিক রোগ। “
তিমির চোখে জল। আমি বললাম ,” এতোই যখন বুঝিস তখন এই সর্বনেশে খেলা কেন খেলিস ?”
তিমি বললো ,” কারণ আমিও একা “
আমি তিমিকে বললাম ,”ওই দেখ একটা নীল তিমির ঝাঁক আসছে। মিশে যা ওদের সাথে। নিজে বাঁচ আর অন্যদের বাঁচতে দে। “
ঝাঁকের দিকে মুখ ঘোরালো তিমি। যাবার আগে বলে গেলো ,” একাকিত্ব বড়ো সাংঘাতিক জিনিস। তুই দেখিস যাতে সবাই এই কথাটা বোঝে আর পয়সার লোভে কেরিয়ারের পেছনে দৌড়ে কিংবা দাম্পত্য কলহের মধ্যে পড়ে ছেলে মেয়ে গুলো যেন একা না হয়ে যায়। আজ তুই আমার হাত থেকে ওদের বাঁচালি কিন্তু কাল হয়তো লাল হাঙ্গর আসবে নীল তিমির জায়গায়। কজনকে ঠেকাবি ? তার থেকে নিজেরাই পাল্টে যা “
***********************************************************************************
“ওঠ ওরে উঠে পর। বেলা হয়ে গেছে। একসাথে চা খাবিনা ?” মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। বাবা দেখলাম শর্টস আর টি শার্ট পরে রেডি। আজ আমাদের ব্যাডমিন্টন ম্যাচ খেলার কথা। টেবিলের ওপরে একটা তিমি মাছের ছবি। সেটা যেন ফিস ফিস করে বলল ,” নাঃ আমি ছবিতেই ভালো আছি। এ পরিবারে আমার কোনো জায়গা নেই “
 (এ সর্বনেশে খেলা বন্ধ হোক )
——————————
শান্তনু মুখোপাধ্যায় (জয় )
#SantanuStory

3 comments

  1. Suman Ghosh says:

    Excellent sir…
    This is Suman Ghosh from Jalpaiguri. This is an beautiful story on present situation. We the Durga Puja Committee of Baman Para Yubak Sangha, Jalpaiguri will publish a Magazine for this year Puja. We will be very grateful if you allow to publish your this story. Waiting for your reply.

    1. Santanu says:

      Ok… you have my permission for this story.. though another magazine has taken the story already

  2. Parna Gupta says:

    Joy tor lekha porlam…bhalo laglo…muniadi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *