**************************************
এফ এম রেডিও জকি স্যামের খুব নাম ডাক। আসল নাম শ্যামলেন্দু সরকার। কিন্তু ওই নামে appeal নেই। তাই নাম পাল্টে স্যাম করতে হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে সামনে। আজকাল আর পাঁচটা জিনিসের মতো ওটাও পণ্য। একটা রোড শো করতে হবে। যে কোনো কথায় মজা খুঁজে বের করে লোকেদের নিয়ে খোরাক করাই স্যামের ইউ এস পি।
আজ সকাল সকাল সে বেরিয়ে পড়েছে লুকোনো ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন নিয়ে। ক্যামেরা দিয়ে ফেসবুক লাইভ হবে আর কথা গুলো অন এয়ার যাবে।
দেশপ্রিয় পার্কের থেকে একটু এগিয়ে পাওয়া গেলো এক যুবক যুবতীকে। এগিয়ে গিয়ে তাদের জিগেস করলো স্যাম।
– “কাল তো ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে ”
-” ও ইয়েস ” বললো যুবতী
– ” ক্ষুদিরামের নাম শুনেছ ?”
যুবতী একটা লজ্জা হাসি হেসে বললো ,” ইয়েস। দ্যাট ইয়ং বোম্বার ”
খোরাক পেয়ে গেছে স্যাম।
সে উৎসাহ দিয়ে বললো ,” আর কি জানো ?”
মেয়েটা একটু ভেবে বলল ,” আর একটা জিনিস জানি। বলবো ?”
-“বলো। নিশ্চই বলবে ”
মেয়েটি মুচকি হেসে বললো ,” বার খেয়ে ক্ষুদিরাম ”
স্যামের কাজ হয়ে গেছে। এর ওপর মশলা মেরে আজ যুব সমাজের অবক্ষয় আর মূল্যবোধের বিলুপ্তি এটা নিয়ে একটা গরম গরম ভাষণ দিলে দর্শক শুধু খাবে তাই নয় এটা সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যাবে।
মেয়েটাকে ধন্যবাদ দিয়ে এগোলো স্যাম। আরেকটা বাইট চাই। তাতেই আধা ঘন্টার প্রোগ্রামের রসদ রেডি হয়ে যাবে।
এবার একটা অন্য প্রোফাইল চাই। একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ময়লা একটা জামা পরে। কাঁধে তার চেয়েও ময়লা একটা ব্যাগ। দেখা যাক ও কি জানে। প্ল্যান হচ্ছে ওই মেয়েটাকে কিছু সহজ প্রশ্ন করা হবে যাতে ও বলতে পারে। না পারলে শিখিয়ে দিয়ে রিটেক। তারপর স্যাম তার নিপুন উপস্থাপনায় প্রমান করবে যে একজন রাস্তার ধারে বেড়ে ওঠা শিশু আজ দেশ সমন্ধে অনেক বেশি জানে তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিতদের চেয়ে।
একটা তিরঙ্গা পতাকা বের করে স্যাম মেয়েটাকে জিগেস করলো।
– ” এটা কি বোলো তো ”
মেয়েটি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো জাতীয় পতাকার দিকে। তারপর একটা ঘড়ঘরে গলায় উত্তর দিলো,”ধান্দা”|
এই উত্তর অবশ্য স্যাম এক্সপেক্ট করেনি।
স্যাম আবার পতাকা দেখিয়ে বললো ,” এটাতো আমাদের জাতীয় পতাকা। ”
মেয়েটা আবার একই রকম চাপা গলায় বললো ,
“ওটা তোমার কাছে হবে ; আমার কাছে ওটা রুটি। বাবা তাই শিখিয়েছে। ”
স্যাম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। মেয়েটা হাত তুলে ওকে দাঁড় করলো।
সামনে সিগন্যাল। লাল বাতি জ্বলার ফলে এখন গাড়ি গুলো দাঁড়িয়েছে। মেয়েটি কাঁধের ব্যাগের থেকে বের করলো দুটো ছোটো পতাকা। তারপর এ গাড়ি , ও গাড়ির কাঁচে নরম আঙ্গুল দিয়ে টোকা মেরে বলতে লাগলো , মাত্র তিরিশ , মাত্র তিরিশ। গাড়িতে পতাকা লাগান। মাত্র তিরিশ ”
স্যাম ওরফে শ্যামলেন্দুর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। এতো জল কি করে এসে জমলো তার চোখে। সে তো বেরিয়েছে মানুষকে গল্প শুনিয়ে আনন্দ দেবার জন্য। কিন্তু এ কি স্বাধীনতা ? যে আঙুলে আজ পেনসিল থাকার কথা সেই আঙ্গুল আজ এসি গাড়ির কাঁচে টোকা মেরে বেড়াচ্ছে তিরিশ টাকার জন্য। তার কাছে এই স্বাধীনতার কি মূল্য ? সেখানে মানুষের আবেগ মেশানো তেরঙ্গা তিরিশ টাকার ধান্দা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর জবাব কি কেউ দেবে ?
ফেরার পথে ঠিক করে ফেললো শ্যামলেন্দু। কোনো চটুল খোরাক নয়। স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠান হবে পথ শিশুদের নিয়ে। তাদের কথা সে পৌঁছে দেবে ঘরে ঘরে। আবেদন করবে এদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে। যদি একজন-ও স্বহৃদয় মানুষ তার ডাকে সাড়া দেন আর একজন-ও পথশিশু তার বাঁচার মানে খুঁজে পায়। ব্যবসার সামগ্রী ফেলে হাতে তুলে নেয় পেন্সিল খাতা তবে সেদিনই হবে প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস।
জয় হিন্দ !
********************************************************************************
শান্তনু মুখোপাধ্যায় (জয় )
#SantanuStory